Friday, October 07, 2016

ইয়েমেনে ক্ষুধার সঙ্গে শিশুদের যুদ্ধ

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের হোদাইদা শহরের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু। সম্প্রতি তোলা ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। ছবি: রয়টার্স
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের হোদাইদা শহরের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু। সম্প্রতি তোলা ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। ছবি: রয়টার্স




যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ছয় বছরের শিশু সালেম ইসা। তার হাড়জিরজিরে কায়া দেখে মনে হয় বয়সটা আরও কম। চিকিৎসার জন্য অভিভাবকেরা তাকে ভর্তি করেছেন ইয়েমেনের সানায় অবস্থিত সরকারি থাওরা হাসপাতালে। শুধু ইসা নয়, তার মতো লিকলিকে হাত-পা নিয়ে অনেক শিশু ভর্তি হয়েছে ওই হাসপাতালে। সঙ্গে অভিভাবকদের ভিড়। এই শিশুরা দেশটিতে চলা গৃহযুদ্ধের সরাসরি কুফল ভোগ করছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
থাওরা হাসপাতালে আগে মাসে গড়ে এমন ১০ থেকে ২০ জন শিশুর আগমন ঘটত। কয়েক মাসে তা বেড়ে গেছে। এখন প্রতি মাসে গড়ে ১২০ জন শিশুকে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালে ইসার মা বলছিলেন, ‘আমি সাধারণত তাকে বিস্কুট খাওয়াই। কিন্তু সে খুবই দুর্বল। সে কিছুই খেতে পারছে না।’ অগত্যা তিনি সন্তানকে বাঁচাতে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
এমন শিশুদের দেখা যে শুধু থাওরা হাসপাতালে মিলছে, এমন নয়। আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দরিদ্র এই দেশের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালে ক্রমে এমন শিশুদের ভিড় বাড়ছে। হোদেইদা নামের একটি শহরের এক হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জাতিসংঘের মানবকল্যাণ সহায়তাপ্রধান স্টিফেন ও’ব্যারেন বলেন, ছোট শিশুরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে।

তবে কি দেশটিতে দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে? এ ব্যাপারে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত কয়েক মাসের গৃহযুদ্ধ ও সরকার বন্দর আটকে রাখার কারণে দেশটিতে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ খাদ্যসংকটে ভুগছে। এই সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, চরম অপুষ্টিতে ভুগে ৩ লাখ ৭০ হাজার শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১৫ লাখ শিশু ক্ষুধার্ত থেকে যাচ্ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার সৃষ্টি করবে। দেশটির পাঁচ বছরের কমবয়সী অর্ধেকের বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইয়েমেনে শিশুদের ভবিষ্যৎ এমন হুমকির মুখে পড়ার পেছনে সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী হুতিদের গৃহযুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। দেশটির সৌদি জোট-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দেশটির হুতি বিদ্রোহীদের দমাতে তাদের অধ্যুষিত এলাকায় বন্দর অবরোধ আরোপ করেছেন। এ ছাড়া ইরানের সমর্থন পাওয়া হুতি বিদ্রোহীদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে ফেলতে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপারে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তর রাজধানী সানা থেকে সরিয়ে এডেনে নিয়ে গেছেন। কারণ, সানা এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া তিনি নতুন একজন গভর্নর নিয়োগ করেছেন। আর নতুন গভর্নর ঘোষণা দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো অর্থ নেই। এটি দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মনে আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে। নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইয়েমেনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আমল নাসের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে প্রেসিডেন্ট হাদির এমন সিদ্ধান্তের ফলে ১০ লাখেরও বেশি চাকরিজীবী বেতন পাননি। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ হয়তো দীর্ঘ মেয়াদে হুতিদের চাপে ফেলবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সরকারের এমন নীতির সমালোচনা করে অক্সফামের মানবকল্যাণ নীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা রিচার্ড স্ট্যানফোর্থ বলেন, প্রতিপক্ষকে দমন করতে গিয়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে। আর এর ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জরুরি ত্রাণ সহায়তা ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখছেন না ইয়েমেনের সামাজিক উন্নয়ন তহবিলের ইব্রাহিম মাহমুদ। তিনি মনে করেন, এ দুটি পদক্ষেপই পারে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে।

ইউরোপের বাজারে ‘সর্বোচ্চ স্বাধীনতা’ চান থেরেসা মে



যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বা ব্রেক্সিটের পর ইউরোপের একক বাজারে ‘সর্বোচ্চ স্বাধীনতার’ দাবি করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আবার একই সঙ্গে তিনি অভিবাসনের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছেন। গতকাল বুধবার কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলনে এসব কথা বলেন মে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ দাবিকে ইইউ নেতারা অবশ্য স্ববিরোধী বলে মনে করেন। তাঁদের কথা, একক বাজারে প্রবেশের অধিকার পাওয়াটা শ্রমিকদের অবাধ চলাচলের বিষয়টির নিশ্চয়তার ওপর নির্ভর করে।
থেরেসা মে বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোকে একক বাজারে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিতে চাই। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানকেও আমাদের এখানে সেই সুযোগ দিতে চাই।’ তবে মে বলেন, ‘অভিবাসনের ওপর নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমরা ইইউ ত্যাগ করছি না।’
গত রোববার মে বার্মিংহামে ঘোষণা করেন, আগামী মার্চের শেষ দিক থেকে তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরুর জন্য ইইউর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন। এর ফলে ২০১৯ সালের শুরুতে ইইউ থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল ব্রেক্সিট নিয়ে আবার মে বলেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া হবে খুবই কঠিন। এতে কিছু ছাড় দেওয়া এবং কিছু গ্রহণ—দুই-ই থাকবে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ইসিবির ভিডিও। বাসের ভেতর থেকে তোলা। ছবি: ফেসবুক

নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ইংল্যান্ড সিরিজেনজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ। প্রতিদিনের কথাবার্তায় তা–ই বারবার উঠে আসছে নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। কাল শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ। কিন্তু আজকের সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরে ফিরে এল নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। 

ইংল্যান্ড দলের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে জন্য ইংল্যান্ড দলে কোথাও যাওয়ার আগে আশপাশের সড়কের গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় সিগন্যালে আটকা পড়ছে নগর-বাসী। এ বিষয়টি নজর এড়ায়নি ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক জস বাটলারের। 
তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এটা বুঝতে পারছেন বাটলার, ‘কড়া নিরাপত্তার বিষয়টি তো খোলা চোখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি খবরগুলো দেখছিলাম, সেখানে যে ছবিগুলো দেখেছি, সেটা দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়। এমন কিছু কখনো দেখতে চাই না। এটা খুব দুঃখজনক। তবে সবকিছুই ভালো মতো চলছে। আমাদের জন্য এখানে যাতায়াতের (যানজট) সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানকার মানুষদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে, যা তাঁদের জন্য খুব হতাশাজনক।’ 
তবে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা যে প্রয়োজন ছিল, সেটাও জানেন বাটলার। বাংলাদেশের দেওয়া নিরাপত্তায় ইংল্যান্ড দলের সন্তুষ্টিটাও জানিয়ে দিলেন অধিনায়ক, ‘কিন্তু আমাদের এটা প্রয়োজন ছিল। দুর্দান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাদের জন্য। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় কখনোই নিরাপত্তা প্রসঙ্গ উঠে আসছে না, তাতেই বোঝা যায়, নিরাপত্তা কতটা ভালো এবার।’ 
সাধারণ মানুষ এই কষ্ট যে হাসিমুখে মেনে নিচ্ছে, এই ছবিও নিশ্চয়ই দেখেছে ইংল্যান্ড দল। মঈন আলীর কথায় হয়তো তাই বারবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা।

‘রোনালদো এখন রিয়ালের সমস্যা’

রোনালদোর ফিটনেসের অভাবেই কি ভুগছে রিয়াল? ছবি: এএফপি

ফুসফুস যদি ঠিকঠাক কাজ না করে, শরীর ঠিকমতো চলবে?
নিশ্চয়ই না। রিয়াল মাদ্রিদেরও হয়েছে এখন তেমন দশা। দলের প্রাণভোমরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই পুরোপুরি ফিট নন, রিয়ালও হয়তো এ জন্যই একটু ফর্ম হারাচ্ছে?
এমন নয় যে, রিয়াল কোনো ম্যাচ হেরেছে। তবে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বশেষ চার ম্যাচেই ড্র করেছে জিনেদিন জিদানের দল। রিয়ালের জন্য তো এটিই ব্যর্থতার প্রতিশব্দ। আর রিয়ালের সাবেক কোচ ফাবিও ক্যাপেলোর চোখে এর সবচেয়ে বেশি দায়টা যাচ্ছে দলের প্রাণভোমরার দিকেই—রোনালদো। অবশ্য ফর্মের চেয়েও বেশি পর্তুগিজ যুবরাজের ফিটনেস নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন খ্যাতনামা এই কোচ।
মৌসুমের শুরুটা কী দুর্দান্তই না হয়েছিল রিয়ালের! লিগে প্রথম চার ম্যাচেই জয়, সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগেও গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্পোর্টিং ক্লাব দ্য পর্তুগালের বিপক্ষে জয় এসেছে শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে। লিগে টানা জয়ের বার্সেলোনার রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছিল লস ব্লাঙ্কোরা (১৬ ম্যাচ)। তখন কে ভেবেছিল, চার ম্যাচ পর সেই রিয়ালকে নিয়েই এমন ব্যর্থতার বিশ্লেষণ চলবে, চলবে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের কাটা-ছেঁড়া।

ক্যাপেলোর কাটা-ছেঁড়ায় বেরিয়ে এসেছে রোনালদোর ফিটনেস। স্প্যানিশ রেডিও ক্যাদেনা কোপেকে মিলান, জুভেন্টাস, রোমা, ইংল্যান্ড, রাশিয়ার মতো দলের ভার সামলানো ক্যাপেলো বলেছেন, ‘রিয়ালের জন্য এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দলের সেরা খেলোয়াড় ও, কিন্তু এই মুহূর্তে ও শারীরিকভাবে পুরো ফিট নয়।’
রোনালদোর ফিটনেসের ঘাটতি জিদানের চোখেও পড়েছে। এ কারণেই রোনালদোকে লিগে এক ম্যাচে তুলে এনেছিলেন রিয়াল কোচ, যে অভিজ্ঞতা রোনালদোর জন্য বিরল। ক্যাপেলোও বলেছেন, ‘লাস পালমাসের বিপক্ষে অন্য রকম একটা ব্যাপার দেখলাম। এই প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচে কৌশলগত কারণে রোনালদোকে উঠিয়ে নেওয়া হলো। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। জিদান বলেই তেমন কিছু করতে পেরেছে, অন্য কারও সেই সাহসই হতো না। তবে রোনালদোও তো ভালো ফর্মে নেই।’
লাস পালমাস ম্যাচে মাঠ ছাড়ার সময় কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন রোনালদো। তবে ক্যাপেলো যা বললেন, তাতে ৩১ বছর বয়সী রোনালদোকে এমন আরও সময়ের জন্য তৈরি থাকতে হতে পারে, ‘ও শুধু এ নিয়ে নিজের ওপরই হতাশ হতে পারে। ও শারীরিক ক্ষমতার সেরাটা পার হয়ে যাচ্ছে, জিদানও এখন এ ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছে। লা লিগায় তিনটি দলেই খেলোয়াড় রোটেশন অনেক বেশি হয়, মনে হচ্ছে রোনালদোও এখন সেটির অংশ হতে যাচ্ছে।’

কোনো দিন কোনো শিক্ষক জানতে চাননি

লেখিকা
স্কুল জীবনের কথা মনে করে আতঙ্কিত হই আজও।
বন্ধের পর স্কুল খুলবে সেই আতঙ্কে কী ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত দিন কাটাতাম। অন্যদের কথা জানি না। তবে আমার এমনটি হতো। মনে আছে ক্লাস টুতে পড়ার সময় আমার পচা হাতের লেখার খাতাটি ম্যাডাম ক্লাসভর্তি সকলকে উঁচু করে দেখিয়ে বলেছিলেন, তোমরা কি কেউ বুঝতে পার এখানে কি লেখা আছে? সকলে একযোগে হো হো করে হেসে ওঠে। আর ছোট্ট আমি সেদিন লজ্জা–অপমানে আরও ছোট হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সংকোচে নিজের ভেতরেই একরকম হীনমন্যতা কাজ করত। অন্যদের সঙ্গে মিশতে আড়ষ্ট হয়ে থাকতাম। পেছনের বেঞ্চিতে চুপটি করে বসে থাকতাম।
খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল শেষ করে যখন মাতৃপীঠ গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হলাম, সেখানেও ছিল ভয়াবহ আতঙ্ক। রওশন ম্যাডাম পড়া না পারলে বেত নিয়ে সামনে আসতেন। কখনো ডান হাত, কখনো বাঁ হাত মেলে ধরতে হতো। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতো ভয়াবহভাবে। বুকের ভেতরটায় যেন কেউ খামচি দিয়ে ধরেছে। চোখ মুখ খিঁচে থাকতাম। অতঃপর ম্যাডাম তাঁর শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ঠাস ঠাস মারতেন। কয়েকদিন সেই হাত ফুলে থাকত। ব্যথায় গোঙাতাম সকলের অগোচরে। কখনো বা বারান্দায় রোদে দাঁড় করিয়ে রাখতেন এক পায়ে। পা যদি এক পলকের জন্যও মেঝেতে লাগত, অমনি উঠে এসে ঠাস ঠাস।

যেহেতু পড়া পারিনি বলে মার খাওয়া, তাই বাড়িতেও কাউকে বলা যেত না, এ অমানবিক নির্যাতনের কথা। সব শিশুর তো আর একই সমান মেধা কিংবা পড়া বোঝার ক্ষমতা থাকে না। আমি সেই কম বোঝা কিংবা দেরিতে বোঝা টাইপের ছাত্রী ছিলাম। তাই স্কুল জীবন আমার কাছে দুঃসহ যন্ত্রণাময় একটি জীবন ছিল। খুব দুঃখ কষ্ট নিয়ে আজ শিক্ষক দিবসে বলতেই হচ্ছে, ক্লাসের অন্যতম খারাপ ছাত্রীটির পাশে পরম মমতা ও নির্ভরতায় কোনো শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। কোনো দিন কোনো শিক্ষক জানতে চাননি কেন পড়া পারছি না, কিংবা কি সমস্যা।
সেদিনের শিশু আমি আজ দুই সন্তানের মা।
এখানে নিউইয়র্কের স্কুলগুলোয় প্যারেন্ট-টিচার কনফারেন্স হয় বছরে তিনবার। প্রতিবার রিপোর্ট কার্ড হাতে নিয়ে ছেলের শিক্ষকদের সঙ্গে সেই সব মিটিংয়ে আমি তার হাতের লেখা নিয়ে আলোচনা করি। সপ্তম ক্লাসে পড়া বড় ছেলে রিয়াসাত, যার হাতের লেখা এত ছোট, যা পড়া ও বোঝা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। খানিক বিরক্তি, উদ্বেগ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করি কেমন করে সে রাইটিংয়ে ৯৮% নম্বর পায়! কিন্তু শিক্ষকেরা প্রতিবারই আমায় আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, এখন টাইপিংয়ের যুগ, হাতের লেখা নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া আমাদের বুঝতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তুমি যদি এটি নিয়ে তাকে মানসিক চাপে রাখ, তাহলে সে মূল বিষয়টি লিখতে ভুল করবে কিংবা অমনোযোগী হবে।
বছরের দুই মাস যখন স্কুলগুলোয় গ্রীষ্মের ছুটি থাকে, সেই সময়টাতে প্রতিটি পরিবার নিজেদের সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করে যার যার মতো করে বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। কেউ শহরের ভেতরেই আনন্দ বিনোদনে সময় কাটায়। কেউবা দূরের শহরে। এই যে এত হই হুল্লোড়, লেখাপড়াবিহীন ঘুরে বেড়ানো, এর মাঝেও আমার ছয় বছরের ছোট্ট রিহান মাঝে মাঝেই উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করে যায় অবিরত, আমি স্কুলে যাব না? কখন আবার স্কুলে যাব? আমি আমার স্কুল মিস করি, টিচার মিস করি...।
এমন প্রশ্নে আমি আমার পেছনে ফেলে আসা সময়ের কথা ভাবি। আমার এমন একটি শৈশব প্রয়োজন ছিল, এমন কিছু স্মৃতি বড় বেশি প্রয়োজন ছিল, যেখানে আজ গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলতে পারতাম, আমি আমার স্কুল মিস করি, আমি আমার শিক্ষকদের মিস করি।
শিক্ষকদের ছায়ায়, পরম মমতায়, নির্ভরতায় ভালো থাকুক আমাদের শিশুরা।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ফের হামলা, ৩ সন্ত্রাসী নিহত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লানগেটের একটি সেনাশিবিরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পরে সেনাবাহিনীর গুলিতে সন্দেহভাজন তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
ভারতের এক সেনা কর্মকর্তার ভাষ্য, ভোর পাঁচটার দিকে সন্ত্রাসীরা একটি সেনাশিবির লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সেনাদের গুলিতে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল বুধবার রাতে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশের অন্তত তিনটি চেষ্টা হয়েছে। সব চেষ্টাই ভন্ডুল করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীদের এই ব্যর্থ চেষ্টায় পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছিল।
গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল একটি প্রতিবেদন দেন। এতে বলা হয়, প্রায় ১০০ সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ভারতে ঢুকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

গত মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরির সেনাছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জঙ্গি আস্তানায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবি করে ভারত। ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সীমান্তে বিচ্ছিন্নভাবে গুলি বিনিময়ের একাধিক ঘটনা ঘটে। গত রোববার ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ইংল্যান্ডের স্বস্তি বাড়িয়ে দিল কমান্ডো অনুশীলন

সেনাবাহিনীর দুর্ধর্ষ কমান্ডোদের মহড়ায় আশ্বস্ত ইংলিশ ক্রিকেট দল। ছবি: শামসুল হক।

বাংলাদেশে পা রাখার পর থেকেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কাটছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের দিনকাল। হোটেল থেকে মাঠের অনুশীলন কিংবা কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের গলফ-বিহার, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ঘিরে রাখছে সব সময়। হোটেলের চারপাশে অস্ত্র হাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তো আছেনই, ইংলিশ দলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সন্ত্রাস দমনের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব। 

দলের আসা-যাওয়ার পথ নিরাপদ করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাদাপোশাকধারী সদস্যরাও আছেন। গত কয়েক দিনে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে যে মানের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট ইংলিশ ক্রিকেট দল। মঈন আলী যেমন বলেছেন, বাংলাদেশ তাদের জন্য যে মানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, সেটা তাঁর দেখা সেরা। বাংলাদেশকে এই জায়গায় হারাতে হলে অন্য যেকোনো দেশকেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
আজ মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিশেষ নিরাপত্তা মহড়াও হয়ে গেল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এভিয়েশন উইং, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর ১ প্যারা কমান্ডো ইউনিটের সদস্য আজ মিরপুরে জরুরি পরিস্থিতি দেখা ​দিলে কী করণীয়, সেটাই ঝালিয়ে নিলেন। মাঠে খেলার সময় সন্ত্রাসী হামলা কিংবা খেলোয়াড়দের জিম্মির ঘটনা ঘটলে কীভাবে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা সেই পরিস্থিতি সামাল দেবে, আজকের মহড়াটা ছিল মূলত সেটিরই প্রদর্শনী। মহড়ার সময় উপস্থিত ছিলেন ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রেগ ডিকাসন। 
মিরপুরের এই নিরাপত্তা মহড়ায় দারুণ খুশি ডিকাসন। তিনি বলেছেন, ‘এই নিরাপত্তা মহড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ইউনিটের সদস্যরা নিজেদের সক্ষমতা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, এই মহড়াটি বাংলাদেশ সফরে থাকা ইংলিশ দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আমরা যে ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছি, তা দুর্দান্তই।’