পেলে
:
সান্তোস ওই সময় ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। তাদের ভিত্তিটা খুবই ভালো
ছিল, তরুণদের ভালো করার জন্য সেটি ছিল খুব ভালো মঞ্চ। সে জন্যই আমি অত
দ্রুত প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলাম। কোলচিনহো নামের আমাদের আরেকজন খেলোয়াড়
ছিল। সেও ১৭ বছর বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু এরপরই সে হাঁটু
ভেঙে ফেলে। এডুও ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিল দলে খেলেছে। রিও ডি জেনিরো বা
সাও পাওলোর বড় ক্লাবে যাওয়ার সুযোগ ছিল আমার। কিন্তু সান্তোসের তরুণ দলটা
তখন বেশ ভালো করছিল। হঠাৎ করেই আমাদের মতো অনেককে তারা একসঙ্গে পেয়ে যায়।
* এমন কোনো মুহূর্ত কি মনে পড়ে, যখন বুঝতে পারলেন পেশাদার ফুটবলই আপনার জায়গা?
পেলে: সান্তোসে যোগ
দেওয়ার কয়েক মাস পর আমরা করিন্থিয়ানসের সঙ্গে খেলেছিলাম। সাও পাওলোর প্রথম
বিভাগের দল নয়, সান্তান্দ্রে নামের একটা শহরের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব।
বিরতির পর নেমে আমি নিজের প্রথম গোল পেয়েছিলাম। ওটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলগুলোর একটি।
* কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বকাপ জিতে আপনি রাতারাতি তারকা হয়ে গেলেন। জীবনটা অত দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে গেল কীভাবে?
পেলে: ১৯৫৭ সালে আমি
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জাতীয় দলের প্রথম ম্যাচ খেলি ও প্রথম গোল করি। তখন
আমার বয়স ছিল ১৬। ওই ম্যাচটা আমরা ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিলাম। সান্তোসে
দ্বিতীয় বছরের পরেই বাইরে বেরোনো আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে গেল। তখন আমার
বয়স ১৭। অথচ এরই মধ্যে বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছি। মানুষজন বেশি মাতামাতি করত,
কারণ ওই সময় এ ব্যাপারটা এতটা স্বাভাবিক ছিল না। এখন তো টেলিভিশনের কল্যাণে
অনেক তরুণকেই দেখা যায়। একটা গোল করলেই সেটা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু আমার সময় ব্যাপারটা এমন ছিল না। আমার বয়স দেখে মানুষজন বিস্মিত হতো।
আমাকে দেখার পর মানুষজন বলত, ‘আরে, এই বাচ্চা ছেলেটা ব্রাজিলে খেলে?’ আমি
তখনো শারীরিকভাবে অতটা শক্তপোক্ত ছিলাম না, কিন্তু খেলাটা বোঝার চেষ্টা
করতাম। এখনকার ছেলেরা অনেক বেশি সমর্থন পায়, তাদের সুযোগটা অনেক বেশি।
* বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে সান্তোসে ফেরার পর কেমন অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন? কারও মধ্যে ঈর্ষা দেখেননি?
পেলে: না না, বরং তার
উল্টো। আমাদের দলে তো বিশ্বকাপের তিনজন ছিল। জিতো ছিল মাঝমাঠে, পেপে অবশ্য
দলে থাকলেও খেলেনি। সান্তোসে আমরা সবাই একত্র হয়েছিলাম।
* এটা কি সত্যি ১৯৫৮ বিশ্বকাপ থেকে ফেরার এক বছর পর আপনি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?
পেলে: হ্যাঁ, ১৯৫৮
সালের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরার পর আমি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিই। ব্যাপারটি
দুর্দান্ত ছিল। আমি নিজের ছেলেদের তো বটেই, অন্য সবাইকেও এই কাজটা করতে
বলি। কারণ এখান থেকে অনেক কিছুই শেখা যায়। আমার কাছেও অভিজ্ঞতাটা ছিল
দারুণ। কারণ আমি এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। ফিরে এসে আমি বললাম, ‘যাক,
এবার আমার ওপর কোনো চাপ নেই।’ কিন্তু সান্তোসে আমার বন্ধুরা বলল, ‘তোমাকে
তরুণদের মধ্যে আদর্শ হতে হবে। তোমাকে সামরিক বাহিনীতে যেতে হবে।’ আমি
সেখানে রান্না করতে শিখেছি, মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। কীভাবে হাত ধুতে
হয়, কাপড় ইস্তিরি করতে হয়, সব শিখেছি। জঙ্গলে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, সেটাও
শিখেছি। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে শৃঙ্খলা, যেটা আমাকে অনেক সাহায্য
করেছে।
* সান্তোসে থাকার জন্য আপনি ইউরোপের অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সান্তোসে কি আপনি এতটাই খুশি ছিলেন?
পেলে: তখন আসলে বাইরে
খেলতে যাওয়ার চল খুব বেশি ছিল না। এবং আমরা ছিলাম অনেকটা পরিবারের মতো।
তিন, চার বা পাঁচ বছর ধরে আমরা একসঙ্গে খেলছিলাম। কিছু টাকার জন্য আপনি এটা
কেন ছাড়বেন? ১৯৬৮ সালে আমার ইউরোপ বা মেক্সিকোতে যাওয়ার প্রস্তাব ছিল।
কিন্তু আমি সান্তোসেই থেকে যাই। এমনকি সান্তোস ছাড়ার পরও আমার ইন্টার
মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসে যাওয়ার প্রস্তাব ছিল। সত্তরের দশকে অনেক
ব্রাজিলিয়ানই ইউরোপে যাচ্ছিল, কিন্তু আমি না-ই বলেছি।
আরো জানতে নিচের লিংকে ক্লিক
করুন
0 comments:
Post a Comment