Wednesday, October 05, 2016

রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা বন্ধের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করারও অভিযোগ এনেছে, যা দেশটি অস্বীকার করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্লুটোনিয়াম নিষ্ক্রিয়করণ চুক্তি স্থগিত করার পরই যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণা এল। প্লুটোনিয়াম নিষ্ক্রিয়করণ চুক্তি স্থগিত করাকে স্নায়ুযুদ্ধ যুগের দুই বৈরী দেশের সম্পর্কে নতুন অবনতির ইঙ্গিত মনে করা হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব আলেপ্পোতে আগুন সৃষ্টিকারী বোমা ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কারবি সোমবার বলেন, সিরিয়ার যুদ্ধ ও সহিংসতা বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ শুরু হয়েছিল, তা স্থগিত করছে যুক্তরাষ্ট্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাশিয়া তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল মঙ্গলবার ব্রাসেলসে রাশিয়ার নিন্দা করে বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ও মারাত্মক ভুল পরামর্শের ফসল’। তবে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জন কেরি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সিরিয়ার জনগণের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি না আমরা। আমরা সিরিয়ার সর্বত্র বৈরিতা বন্ধের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। এর মধ্যে থাকবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমান ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়।’
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের বিপরীতে রাশিয়া ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সামরিক শক্তি প্রয়োগকেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছে। তিনি বলেন, শান্তি আলোচনা বন্ধে মার্কিন ঘোষণার নিন্দা করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা বলেন, ‘আমরা ওয়াশিংটনের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই। আলেপ্পোর মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে করা চুক্তির কোনো শর্তই মেনে চলেনি তারা। শর্ত মেনে না চলার পর এখন এর দায় তারা অন্যের ওপর চাপাতে চাইছে।’
তিনি এ-ও অভিযোগ করেন, সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের ভিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ওই আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
মস্কো ও সিরিয়ার বাহিনী হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে জরুরি ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর আলেপ্পোতে ত্রাণবাহী ট্রাকের বহরে হামলা এই দুই বাহিনীই করেছিল বলে অভিযোগ করেন কারবি।
তবে আলেপ্পোর ত্রাণের বহরে হামলার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। তারা বলেছে, বিমান হামলা থেকে নয়, বরং আগুন লেগে ওই বহরের ক্ষতি হয়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আলেপ্পো শহরে রাশিয়া হামলা বন্ধ না করলে আলোচনা বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেইন গতকাল সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আলেপ্পোতে এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে নতুন সাহসী উদ্যোগ দরকার। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রেখে এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যাতে সিরিয়া পরিস্থিতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো যায়।
সিরিয়ার উত্তরের সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত মাসে দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। এতে শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়।
Location: Bangladesh

0 comments:

Post a Comment