Thursday, October 06, 2016

ছবির আয়নায় নিজেকে দেখুন!

আয়নাবাজি ছবিতে চঞ্চল চৌধুরী ও নাবিলা


‘এই পৃথিবী হলো একটা মঞ্চ। আর আমি সেখানে অভিনেতা।’—আয়নাবাজি ছবির শেষ সংলাপ এটি। ছবিতে শরাফত করিম ওরফে আয়না চরিত্রের চঞ্চল চৌধুরী যখন শেষবারের মতো চরিত্র বদল করেন এবং নেপথ্য থেকে আপনি যখন এই সংলাপটি শুনতে পান, আপনার কাছে পুরো সংলাপটি কি ‘দার্শনিক উক্তি’র মতো মনে হয়?

অমিতাভ রেজা চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র আয়নাবাজির ‘ভেলকি’ বুঝতে হলে এই সংলাপটির কাছে ফিরতেই হবে। কারণ, এ ছবির আয়না একের ভেতরে বহু চরিত্র ধারণ করে আমাদের দেখায় উলঙ্গ এক দুনিয়া, এমনকি আমাদেরও উদোম করে দেয়। আর দর্শক হিসেবে কেবলই মনে হয়, প্রযুক্তিনির্ভর এই আধুনিক সময়ের ব্যক্তিমানুষ আমরা তো নিজেদের ভেতরে বহু চরিত্র নিয়েই বেঁচে আছি।
চারদিকে আয়নাবাজির রব উঠেছে এখন। কিন্তু ছবিটির ‘খেল’ ঠিক কোথায়? কেন এই রব? ফেসবুকে অধিকাংশ দর্শক প্রশংসায় পঞ্চমুখ, দু-একজন ভিন্নমত দিয়েছেন যদিও। তবু হলগুলো পূর্ণ। কোথাও কোথাও ব্ল্যাকেও বিক্রি হচ্ছে টিকিট। আহা, কোথায় ছিল এমন দিন! চলচ্চিত্রের আকালের দিনে এই ‘হিট ছবি’ আমাদের সিনেমাশিল্পের জন্য তো প্রত্যাশার বর্ষণই।
আয়নাবাজির গোটা গল্পটি ফাঁস করা হঠকারিতা হবে। তা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়। গল্পটি এই সময়ের এবং এ ধরনের গল্প ঢাকায় ছবিতে খুব একটা দেখা যায়নি আগে। গল্পের মধ্যে উপর্যুপরি ‘টুইস্ট’ হিসেবে আছেন ছয় চরিত্রের চঞ্চল বা আয়না। এখানে পেশাদার অভিনেতা আয়না (চঞ্চল) একে একে অভিনয় করলেন আরও পাঁচ চরিত্রে। আর পুরো ব্যাপারটি ঘটল আমাদের দেখাশোনার মধ্যে। তবু অধীর হয়ে থাকলাম শেষ রহস্যের দ্বারোদ্‌ঘাটনের জন্য। শেষ অবধি মানতেই হলো, কাহিনিতে বাজার-চলতি ম্যাড়মেড়ে ‘সাসপেন্স’ নয়, প্রকৃত প্রস্তাবে আছে ‘রহস্য’ই। আছে স্মার্ট গল্প। আদতে আয়নাবাজির মূল কবজির জোর গল্পেই। সিনেমায় বাস্তবতার মোড়কে থ্রিলারের যে সুগন্ধি পুরে দেওয়া হলো, তা আমাদের আটকে রাখল পাক্কা দুই ঘণ্টা চব্বিশ মিনিট। ঢাকার অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম হলিউড স্টুডিও, হাওয়া ঘর (না বুঝলে আয়নাবাজি দেখুন!) এবং মহানগরের উঁচু-নিচুতলার কায়কারবার। সঙ্গে সুঅভিনয়, গান (তবে আবহসংগীতের পুরোটাই ছিল পাশ্চাত্যনির্ভর। এ ক্ষেত্রে দেশীয় সংগীতের ওপর কি আস্থা রাখা যেত না?), নান্দনিক সিনেমাটোগ্রাফি, নিপুণ ডিটেইলিং, লোকেশন—সব নিয়ে চলচ্চিত্রটির ‘হারমনি’ মিলেছে এক মোহনায়। দেখতে গিয়ে আপনার মনে হবে না ফর্মুলা ফিল্ম বা বড় দৈর্ঘ্যের নাটক দেখছি। ফ্রেমে ফ্রেমে অটুট সিনেমার ভাষা—ঢাকা শহরের খণ্ড খণ্ড না-বলা গল্প।
এখানে পাওয়া গেল এক ঝাঁ-চকচকে ঢাকা। পুরান ঢাকার অদেখা নতুন রূপ কিংবা ‘নোংরা’ বুড়িগঙ্গাকেও যে এত রূপসীর মহিমায় দেখা যেতে পারে, কে জানত আগে! চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান এ জন্য অবশ্যই কৃতিত্ব পাবেন। কৃতিত্ব পাবেন পরিচালক অমিতাভ রেজা এবং পাত্রপাত্রীরাও—চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা, সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, লুৎফর রহমান জর্জ—যাঁর যাঁর চরিত্রে প্রত্যেকেই মানানসই। বিশেষত একটি শিশু—হলিউড স্টুডিওর গাউসুলের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছে যে ছোট্ট শরিফুল—তার অভিনয়ও ফুল ফোটাল। ‘কামিং’, ‘ইমেল’ এ রকম এক শব্দের ইংরেজি সংলাপে দর্শকের মন ফুরফুরে করে দেয় সে।
পার্থ বড়ুয়া হাজির সাংবাদিকের ভূমিকায়। এখানে তাঁর কাজ মূলত একটিই—আয়নার আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটন। এটি করতে গিয়ে তিনি যে রকম ‘সাংবাদিক-সাংবাদিক’ ভাব ধরেন এবং ঘাটে-অঘাটে তাঁকে যেভাবে মদ পান করতে দেখি, তা বেশ বেখাপ্পা লাগে। এ চরিত্রের দৈর্ঘ্য খানিকটা ছোট হলে কাহিনিচিত্রটি আরও ঝরঝরে হতো।
যুবক আয়না মধ্যবয়সী রাজনীতিবিদ নিজাম সাঈদ চৌধুরীর চরিত্রে পাট করতে করতে যখন জেলে গিয়ে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিল, একটা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল তাঁর দাড়ি কাঁচা-পাকা! আয়না যতই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির ‘প্রক্সি’ দিন না কেন, কোনো যুবকের দাড়ি তো আর নিমেষে সাদা হতে পারে না। এটিও বৈসাদৃশ্যের একটি নমুনা বটে। তবে এগুলো হাজার ভালোর ভিড়ে তিল পরিমাণ মন্দ। সহনীয়।
আরেকটি আপাত ‘বেখাপ্পা’ বিষয় ছবির প্রথম দৃশ্য—সিনেমার টাইটেল দেখানোর আগে এ দৃশ্যে দেখা যায় অজ্ঞাতপরিচয় মৃত এক নারীকে। এরপর পুরো ছবি চলে অন্য এক আবহে। তাহলে এ দৃশ্যের সঙ্গে ছবিটির যোগ কোথায়? প্রশ্নটি আপনার জন্য কুইজ। উত্তর জানতে দেখুনআয়নাবাজি
Location: Bangladesh

0 comments:

Post a Comment