Thursday, October 06, 2016

ময়না বাড়িত না ফিরলে আর ভাত খাইতাম না!

স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলেন খাদিজা। গত সোমবার সকালে ঝটপট গোসল শেষে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। মা তাড়াহুড়া করে রান্নাও সেরেছিলেন। সময়ের অভাবে মায়ের রান্না খেয়ে যেতে পারেননি খাদিজা। তবে মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে খাবেন। কিন্তু সেই খাওয়া আর হয়ে ওঠেনি তাঁর। সেই থেকে খাদিজার মা-ও মুখে কিছু দেননি। তিনি অনবরত বুক চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার ময়না (খাদিজা) বাড়িত ফিরলেই ভাত মুখও দিমু! ময়না বাড়িত না ফিরলে আর ভাত খাইতাম না!’

গতকাল বুধবার দুপুরে খাদিজাদের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে এ মর্মস্পর্শী দৃশ্য। তাঁর মা মনোয়ারা বেগম বিলাপ করছিলেন। বাড়ির অন্যরাও কাঁদছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন প্রতিবেশীরাও। গাছগাছালিঘেরা পুরো বাড়িটিতে কেবল কান্নার শব্দ। কয়েকজন মনোয়ারা বেগমকে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।
খাদিজাদের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ধরে ১৪ কিলোমিটার এগোনোর পর হাতের ডান দিকে কাঁচা রাস্তা ধরে আধা কিলোমিটারের মতো গেলেই খাদিজাদের বাড়ি।
সত্তরোর্ধ্ব নানি কমলারুন বেগম বলেন, খাদিজার দুঃখে তাঁর মা এখন পর্যন্ত পানি মুখে দেয় নাই। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে খাদিজার সৌদিপ্রবাসী বাবা মাসুক মিয়া গতকাল বিকেলে দেশে ফিরেছেন। আর বড় ভাই শাহীন আহমদ চীন থেকে আজ দেশে ফিরছেন।
ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে খাদিজার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গরু ছেদানির (কোপানোর) লাখান আমার মাইয়াডারে ওই পিশাচটা ছেদাইছে! ই-লা হইব জানলে আমার ময়নাটারে পরীক্ষাত পাঠাইতাম না।’ টেলিভিশনে বদরুলের কোপানোর দৃশ্য দেখেছেন জানিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অত ছেদ আমার বাইচ্চাটার মাথার মধ্যে মারছে, বাইচ্চাগু সহ্য করব কেমনে? উপাসী বাইচ্চাটারে কিলা ছেদাইছে, আমি কিলা সহ্য করতাম?’
মনোয়ারা বেগমের বিলাপে আশপাশের নারীদের কয়েকজন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তাঁদের কান্নার শব্দ শুনে মনোয়ারা বেগমও আবার উচ্চ স্বরে কাঁদতে থাকেন। একপর্যায়ে তিন দিনের উপবাসী শরীর নিয়ে মূর্ছা যান মনোয়ারা বেগম। তখনো তাঁর মুখ দিয়ে গোঙানির মতো একটাই কথা বেরোচ্ছে, ‘ময়না আমার, ফিইর‌্যা আয়!’
আবদুল কাইয়ুম নামে এক চাচা বলেন, খাদিজার বাবা এবং তিন চাচা দেশের বাইরে থাকেন। খাদিজারা তিন ভাই ও এক বোন। সে দ্বিতীয়। পড়াশোনার জন্য খাদিজার বড় ভাই চীনে রয়েছেন। তাঁর ছোট দুই ভাই কলেজ ও বিদ্যালয়ে পড়ছে। হামলাকারী বদরুল আলম ২০১১ সালের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কিছুদিন খাদিজাদের বাড়িতে ছোটদের পড়াতেন। কাইয়ুম বলেন, ‘এই বদরুল যে খাদিজার পথের এত বড় কাঁটা হয়ে ছিল, তা পরিবারের সদস্যরাও ঠিকমতো জানত না।’
Location: Bangladesh

0 comments:

Post a Comment