শিশুরা পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে। ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে বলে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ২০১২ সালের গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শিশু পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অভিমত উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিষয়টি সামনে আসে। পুরোনো তথ্য হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এমন নতুন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিশুরা কেন পর্নোগ্রাফিতে ঝুঁকছে?
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্নোগ্রাফির বিষয়যুক্ত বস্তু শিশুদের কাছে সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের কিনে দেওয়া স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে শিশুরা এই অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সুস্থ যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে রাখঢাক প্রবণতা বিষয়টিকে শিশুদের কাছে অস্বাভাবিক করে তুলছে। যৌন স্বাস্থ্য জীবনের স্বাভাবিক অংশ হলেও এ নিয়ে জানার পথ বন্ধ থাকায় শিশুরা অস্বাভাবিক বা বিকৃত পথে গিয়ে এ বিষয়ে ভুল ধারণা পাচ্ছে।
এ বিষয়গুলোর সঙ্গে শিশুদের জন্য খেলাধুলাসহ বিনোদনের সুযোগ না থাকার ওপর গুরুত্ব দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবিব। তাঁর মতে, ঢাকা শহরে শিশুদের খেলাধুলা করার সুযোগ নেই। নেই পর্যাপ্ত বিনোদনের আয়োজন। তাদের জীবনটা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় হাতের কাছে সুযোগগুলো পেয়ে পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে শিশুরা।
১ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ওই গবেষণাটি বলছে, বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পর্নোগ্রাফির চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে তৈরি পর্নো ভিডিও মানুষ বেশি দেখছে। আর এই ভিডিওগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদেরই দেখা যাচ্ছে।
পর্নোগ্রাফির এই জগতে শিশুরা ভোক্তা হওয়ার পাশাপাশি পণ্যেও পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক এস এম ইমরান হোসেন। তাঁর মতে, বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো পর্নোগ্রাফি দেখল। তখন সে অন্য বন্ধুদেরও সেটা দেখায়। এভাবেই জিনিসটা ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া হাতের স্মার্টফোন দিয়েই হয়তো কোনো ছেলে-মেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ভিডিও করে। পরে কোনো কারণে সেই সম্পর্ক ভেঙে গেলে বা অ্যাডভেঞ্চারের বোধ থেকে নিজেরাই ভিডিওগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের নজরদারির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ভালো-মন্দ মেশানো ইন্টারনেটের বিশাল সাগরে বাবা-মা তার সন্তানকে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে ছাড়ছেন, না কি এমনি ছেড়ে দিচ্ছেন—সেটা দেখার বিষয়।
সমাধানের উপায় কী?
যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, সন্তানদের সময় দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাদের সঙ্গে বাবা-মাকে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। বোঝাতে হবে তার ভালো-মন্দের বিষয়ে। বাবা-মায়ের দেওয়া নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা শিশুকে এ ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
শাহ এহসান হাবিব মনে করেন, প্রথমেই দরকার শিশুদের জন্য একটি সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করা। তারা যেন খেলাধুলার পাশাপাশি সাইক্লিং করতে পারে সে জন্য উন্নত বিশ্বের আদলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশ ঘিরে সাইকেল চালানোর লেন তৈরি করা যেতে পারে। রাজধানীর খোলা স্থানগুলো যাতে সত্যিই খোলা থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ তাঁর। বাবা-মায়েরা সুস্থ যৌন জীবন সম্পর্কে শিশুদের না জানানো বা প্রস্তুত না করে তোলার ব্যাপারে ‘সাংস্কৃতিক বাধা’ একটি বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র—সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে।
হেলাল উদ্দিন আহমেদের পরামর্শ, পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দের তালিকা করে সেগুলো ব্লক করে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। এর ফলে শিশুরা এসব শব্দ লিখে সার্চ করলেও কিছু পাবে না। পর্নোগ্রাফিযুক্ত সাইটগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি এর ওপর নিয়মিত মনিটরিংয়ের উদ্যোগও সরকারের তরফ থেকে নিতে হবে। বাবা-মায়ের প্রতি তাঁর পরামর্শ, শিশুরা ব্যবহার করছে এমন ডিভাইসে কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা সন্তানের বাজে সাইটে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে পারেন।
এই তিন শিক্ষকই মনে করেন, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষা সম্পর্কে যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। কারণ, এটি জীবনের একটি অংশ—এই বোধটি স্বাভাবিক পথে শিশুর কাছে না গেলে সে বিকৃত পথে পা বাড়াবে।
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্নোগ্রাফির বিষয়যুক্ত বস্তু শিশুদের কাছে সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের কিনে দেওয়া স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে শিশুরা এই অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সুস্থ যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে রাখঢাক প্রবণতা বিষয়টিকে শিশুদের কাছে অস্বাভাবিক করে তুলছে। যৌন স্বাস্থ্য জীবনের স্বাভাবিক অংশ হলেও এ নিয়ে জানার পথ বন্ধ থাকায় শিশুরা অস্বাভাবিক বা বিকৃত পথে গিয়ে এ বিষয়ে ভুল ধারণা পাচ্ছে।
এ বিষয়গুলোর সঙ্গে শিশুদের জন্য খেলাধুলাসহ বিনোদনের সুযোগ না থাকার ওপর গুরুত্ব দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবিব। তাঁর মতে, ঢাকা শহরে শিশুদের খেলাধুলা করার সুযোগ নেই। নেই পর্যাপ্ত বিনোদনের আয়োজন। তাদের জীবনটা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় হাতের কাছে সুযোগগুলো পেয়ে পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে শিশুরা।
১ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ওই গবেষণাটি বলছে, বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পর্নোগ্রাফির চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে তৈরি পর্নো ভিডিও মানুষ বেশি দেখছে। আর এই ভিডিওগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদেরই দেখা যাচ্ছে।
পর্নোগ্রাফির এই জগতে শিশুরা ভোক্তা হওয়ার পাশাপাশি পণ্যেও পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক এস এম ইমরান হোসেন। তাঁর মতে, বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো পর্নোগ্রাফি দেখল। তখন সে অন্য বন্ধুদেরও সেটা দেখায়। এভাবেই জিনিসটা ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া হাতের স্মার্টফোন দিয়েই হয়তো কোনো ছেলে-মেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ভিডিও করে। পরে কোনো কারণে সেই সম্পর্ক ভেঙে গেলে বা অ্যাডভেঞ্চারের বোধ থেকে নিজেরাই ভিডিওগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের নজরদারির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ভালো-মন্দ মেশানো ইন্টারনেটের বিশাল সাগরে বাবা-মা তার সন্তানকে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে ছাড়ছেন, না কি এমনি ছেড়ে দিচ্ছেন—সেটা দেখার বিষয়।
সমাধানের উপায় কী?
যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, সন্তানদের সময় দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাদের সঙ্গে বাবা-মাকে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। বোঝাতে হবে তার ভালো-মন্দের বিষয়ে। বাবা-মায়ের দেওয়া নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা শিশুকে এ ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
শাহ এহসান হাবিব মনে করেন, প্রথমেই দরকার শিশুদের জন্য একটি সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করা। তারা যেন খেলাধুলার পাশাপাশি সাইক্লিং করতে পারে সে জন্য উন্নত বিশ্বের আদলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশ ঘিরে সাইকেল চালানোর লেন তৈরি করা যেতে পারে। রাজধানীর খোলা স্থানগুলো যাতে সত্যিই খোলা থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ তাঁর। বাবা-মায়েরা সুস্থ যৌন জীবন সম্পর্কে শিশুদের না জানানো বা প্রস্তুত না করে তোলার ব্যাপারে ‘সাংস্কৃতিক বাধা’ একটি বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র—সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে।
হেলাল উদ্দিন আহমেদের পরামর্শ, পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দের তালিকা করে সেগুলো ব্লক করে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। এর ফলে শিশুরা এসব শব্দ লিখে সার্চ করলেও কিছু পাবে না। পর্নোগ্রাফিযুক্ত সাইটগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি এর ওপর নিয়মিত মনিটরিংয়ের উদ্যোগও সরকারের তরফ থেকে নিতে হবে। বাবা-মায়ের প্রতি তাঁর পরামর্শ, শিশুরা ব্যবহার করছে এমন ডিভাইসে কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা সন্তানের বাজে সাইটে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে পারেন।
এই তিন শিক্ষকই মনে করেন, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষা সম্পর্কে যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। কারণ, এটি জীবনের একটি অংশ—এই বোধটি স্বাভাবিক পথে শিশুর কাছে না গেলে সে বিকৃত পথে পা বাড়াবে।
0 comments:
Post a Comment