‘ভূস্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মির এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান এখন মুখোমুখি। আর এই উত্তেজনার মধ্যে প্রায় পুরোপুরি আড়ালে চলে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী কাশ্মিরিদের ইস্যুটি। বুরহান মুজাফ্ফর ওয়ানি নামে এক তরুণ ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর জ্বলে উঠেছিল কাশ্মির।
ভারতীয় বাহিনী সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও সেটা দমন করতে পারছিল না। অসহায় মানুষের আহাজারির শক্তি যে কত প্রচণ্ড, ভারত তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে থাকে। ছররা গুলি (পেলেট) ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছিল না। রেকর্ড ৫৩ দিন টানা কারফিউ জারি করেও শান্ত করা যায়নি। এমনকি ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ঈদের দিনেও কারফিউ বলবৎ রাখা হয়। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কাশ্মিরি নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। হামলায় অন্তত ৭০ কাশ্মিরি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১১ হাজার। এদের মধ্যে সাত হাজার বেসামরিক লোক। ১৭ লাখ ছররা গুলি ব্যবহার করেছে ভারতীয় বাহিনী। এই গুলিতে হাজার হাজার কাশ্মিরি সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি এতই নির্মম ছিল যে, নয়া দিল্লিভিত্তিক অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের যে চিকিৎসকেরা কাশ্মিরে গিয়েছিলেন ছররা গুলিতে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তারা স্বীকার করে বলেছেন, কাশ্মিরে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে।
কাশ্মির ইস্যুতে নয়াদিল্লি তাদের সব গেম প্লান একে একে ব্যর্থ হচ্ছিল। টানা কারফিউ, নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি ভারত। এমন অবস্থায় ভারত প্রথমে চেয়েছিল বেলুচিস্তানকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে। কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি।
কোনো কিছুতেই যখন ভারতের অনুকূলে কিছু হচ্ছিল না তখনই ঘটনাটি ঘটে গেল।
মাত্র চারজন অস্ত্রধারী কাশ্মিরের উরিতে অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি ঘাঁটিতে ঢুকে ১৮ ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা করে, আহত করে আরো ৬০ জনের মতো। এই চারজনই দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ‘লড়াই’ করে অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ভারতের একটি পূর্ণ বাহিনীর সাথে। চারজনই আত্মহত্যা করে বলে ভারতীয় পক্ষ থেকে জানানো হয়। সাথে সাথেই দৃশ্যপট পাল্টে গেল।
কাশ্মির নিয়ে এখন আর কেউ কথা বলে না। সবাই এখন পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। অথচ এর আগে দিয়ে বিশ্বজুড়ে কাশ্মির ইস্যুটি ব্যাপক ঝড় তুলেছিল। বিশেষ করে ভারতীয় বাহিনীর নির্বিচারে ছররা গুলি ব্যবহার অত্যন্ত শক্তমনের মানুষও চুপ থাকতে পারেনি। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রবল লবি উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়ে জাতিসঙ্ঘ মিশন পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। আর পাকিস্তান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেছিল। ভারত বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল। অনেক দিন পর এই প্রথম পাকিস্তানকে দেখা গিয়েছিল সুবিধাজনক অবস্থায়। বিপুলশক্তিতে এগিয়ে থাকা ভারত সমীকরণ বদলাতে চেষ্টা কম করেনি। আর তাতে তারা কিছু সাফল্যও পায়।
যুদ্ধের নানা সমীকরণ কষতে ব্যস্ত সবাই। ভারত এমনিতেই বেশ শক্তিশালী। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি আরো বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে। যে দেশে এখনো শত কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করে, তারা পাশ্চাত্য দুনিয়ার সবচেয়ে দামি অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করছে। পাশ্চাত্যও তাদের অস্ত্র বিক্রির এই বাজারটি লুফে নিতে প্রস্তুত ছিল। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন দিতে দেখা যাচ্ছে ভারতকে।
0 comments:
Post a Comment